Work/Life Balance- এই কথাটা আজকাল প্রায়ই শোনা যায়। বিখ্যাত তথ্য প্রযুক্তি সংস্থা ইনফোসিস-এর চেয়ারম্যান নারায়ণ মূর্তি তো বলেই দিয়েছেন- সবারই সপ্তাহে ৮০ ঘণ্টা কাজ করা উচিৎ। ছুটি নিয়ে বাসায় বসে বউয়ের সাথে গল্প করার কোন মানেই হয়না! এদিকে, ঘরে বসে কাজের স্বাধীনতা মানেই কি জীবনটাকে কাজে ডুবিয়ে দেয়া? অফিসের নির্দিষ্ট সময় না থাকায়, অনেকেই ২৪ ঘন্টার অফিস মোডে চলে যান! সকালে ঘুম থেকে উঠেই ল্যাপটপ, রাতে ঘুমানোর আগেও আবার মেইল চেক- এ যেন এক অন্তহীন চক্র!
সমস্যা কি?
- কাজ আর ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে কোন ব্যাল্যান্স না থাকলে মানসিক চাপ বাড়বেই। আর আজকাল নাগরিক জীবনের সবচে বড় সমস্যাই হল স্ট্রেস। চল্লিশের নীচে হার্ট এটাক এখন একটা কমন ব্যাপার।
- ফ্রিলেন্সারদের সবসময়ে ডেটলাইনের প্রেশার থাকে। সময়মতো কাজ শেষ করতে না পারায় রাত জাগতে হয়, ফলে পরের দিনও সেই ক্লান্তি যেন থেকেই যায়।
- পরিবার বা নিজের জন্য কোন সময়ই থাকে না—জীবন কেটে যায় শুধুই টাস্কলিস্টের মধ্যে!
সমাধান
- একটু প্ল্যানিং আর চিন্তা ভাবনা করে একটা সুশৃঙ্খল রুটিন তৈরি করুন, যেটা নিজের লাইফ স্টাইলের সাথে ম্যাচ করে যায়।
- কাজের সময় ফিক্সড রাখুন। সেটা সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা-ও হতে পারে, আবার নাইট ডিউটির মত রাত ১০টা থেকে সকাল ৬-টাও হতে পারে।
- কাজের জায়গা আলাদা করে ফেলুন। মনে রাখবেন, বাসায় কাজ করলেও আপনি কিন্তু আসলে অফিসই করছেন। তাই বিছানায় বা সোফায় নয়, নিজের মত করে একটা ডেডিকেটেড ওয়ার্ক স্টেশন বানিয়ে ফেলুন।
- ঠিকঠাক ব্রেক নিন। লাঞ্চ টাইমে বা চায়ের ব্রেকে ফোন বা মেইল চেক বন্ধ রাখুন, ফ্যামিলি’র সাথে কোয়ালিটি সময় কাটান।
- সন্ধ্যা বেলার রিচার্জ, মানে আপনার অফিস আওয়ার শেষ হয়ে গেলে আর কোনো কাজ নয়। এই সময়টা শুধু আপনার আর আপনার কাছের মানুষগুলোর জন্য।
পরবর্তী ঝামেলা!
ওয়ার্ক ফ্রম হোম-এর আর একটা বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মনোযোগ ধরে রাখা বা নিজেকে ফোকাস রাখা। এখানে কোন বদরাগী বস সবসময়ে পেছনে লেগে থাকেনা। তাই টেলিভিশন, ভিডিও গেম, ফেসবুক বা ঘরের কাজ- এগুলো সবই আপনার মূল কাজ থেকে আপনাকে টেনে সরিয়ে দিতে পারে। ফলে, আপনার স্কিল বা কার্যকারিতা দুটোই দিন দিন কমবে। আর সেটা প্রভাব ফেলবে আপনার মাসিক ইনকামের ওপর।
সমাধান
- বাসায় কাজ করলে অফিস সহকর্মীদের অনবরত কথাবার্তা বা অপ্রয়োজনীয় মিটিংয়ের ঝামেলা নেই। শুধু প্রয়োজন আপনার নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ।
- যেসব জিনিস আপনাকে কাজ থেকে দূরে রাখছে সেই উৎসগুলো আগে বের করুণ। যেমন-
- ফেসবুক বা ইউটিউবে বেশী সময় কাটাচ্ছেন?
- গেম খেলা বা টিভি দেখার নেশা হয়ে যাচ্ছে না তো?
- বারবার ফ্রিজ চেক করছেন খাওয়ার কিছু আছে কিনা দেখতে!
- বেশী বেশী ঘর গোছাতে ব্যস্ত হয়ে যাচ্ছেন না তো?
সমাধান
- কাজের জোন নির্দিষ্ট করুন: শোবার ঘর বা লাউঞ্জে না বসে একটি আলাদা কাজের জায়গা বানান।
- ডিজিটাল ডিটক্স: কাজের সময় সোশ্যাল মিডিয়া যে কোন নোটিফিকেশন বন্ধ রাখুন। প্রয়োজনে ফোকাস বাড়ানোর অ্যাপ, যেমন Forest, Focus To-Do ব্যবহার করুন। রিয়েল লাইফে এগুলো কিন্তু বেশ কাজে আসে।
- ব্রেকের সময় ঠিক করুন: একটা নির্দিষ্ট সময়ে শর্ট ব্রেক নিন, শুধু তখনই ফেসবুক বা অন্য কিছু চেক করুন।
এরপরে আছে শারীরিক কষ্ট!
ঘরে বসে কাজ করে ইনকাম করার একটা আলাদা মজা আছে। কিন্তু ল্যাপটপ বা ডেস্কটপের সামনে টানা কাজ করলে কিকি হতে পারে, সেটাও জেনে নিন-
- ব্যাক পেইন বা অস্বস্তিকর পিঠব্যথা,
- চোখের জ্বালাপোড়া
- স্টিফ-নেক বা ঘাড় নাড়াতে না পারে, যেটা পরে স্পন্ডিলাইটিস দিকে যেতে থাকে।
- কবজিতে টান
- আর সবশেষে মাথাব্যথা!
সমাধান
- আপনার ব্যবহারের চেয়ারটা যাতে অবশ্যই আরামদায়ক হয়, কারণ সারা দিনে এই ফার্নিচারটাই আপনি সবচে বেশী ব্যবহার করেন। তাই এক্ষেত্রে কিপ্টেমি না করে ভালো ব্র্যান্ডের একটা এক্সিকিউটিভ চেয়ার কিনে নিন। তবে, বাজেট কম থাকলেও অবশ্যই এক্সট্রা সাপোর্ট নিতে ভুলবেন না।
- চোখের যত্ন নিতে টুয়েন্টি-টুয়েন্টি রুল ফলো করুণ। এটা কিন্তু আবার টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটের কোন ব্যাপার না! এর মানে হচ্ছে- প্রতি ২০ মিনিটে ২০ সেকেন্ড ২০ ফিট দূরে তাকান। তাছাড়া, চোখের ওপর চাপ কমাবার জন্য কার্ভড মনিটর বা ব্লু-লাইট ফিল্টারও ব্যবহার করতে পারেন।
- প্রতি ঘণ্টায় ২ মিনিট স্ট্রেচিং করতে পারেন। এতে টেবিলে বসেই ঘাড় বা কাঁধের ব্যায়াম হয়ে যাবে। এ সম্পর্কিত অনেক ভিডিও রেফারেন্স ইউটিউবেই পেয়ে যাবেন।
অসামাজিক না হয়ে যাই!
নিজের বাসা থেকে কাজ করলে স্বাভাবিকভাবেই মানুষের সাথে মেলামেশাটা কম হয়। সহকর্মীদের সাথে আড্ডা বা কফি ব্রেকের গল্পগুজব- জীবন থেকে এসব হাওয়া হয়ে গেলে নিজেকে কিছুটা নিঃসঙ্গ মনে হতে পারে। আপনি বুঝতেই পারেন না কখন নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। তাই একটা সময়ে হয়তো দেখা যাবে, আপনি অফিস স্পেসের সেই ফেলে আসা হাউকাউকেই মিস করছেন!
সমাধান
- প্রযুক্তি আজকাল আমাদের হাতের মুঠোয়। তাই ভিডিও কলে প্রিয় সহকর্মীদের সাথে গল্প করুন, গ্রুপ চ্যাটে মজার মিমস শেয়ার করুন, বা ভার্চুয়াল মিটিংয়ে হালকা আড্ডাও হতে পারে।
- বাসার ব্যক্তিগত পরিবেশে কাজ করলেও, একটু পরিপাটি ড্রেসআপ করে বসুন। এর সাথে বেসিক হাইজিন মেইনটেইন করলে শরীর ও মনে আলাদা এনার্জি পাবেন!
- মাঝে মাঝে ফ্যামিলি বা কাছের বন্ধুদের নিয়ে বেড়াতে যাওয়াটাও যাতে বাদ না পরে!
হ্যাপি ওয়ার্ক ফ্রম সুইট হোম!!
ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্সে ভর্তি হতে পারেন আজই যোগাযোগ করতে পারেন এখানে