ইন্টার্ভিউ টিপস

ইন্টার্ভিউ টিপস

চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছো– এই বিখ্যাত গানটা শোনেননি, এমন কাউকে খুব একটা খুঁজে পাওয়া যাবেনা। কিন্তু এই বহুল প্রত্যাশিত চাকরিটা পাওয়ার আগে ইন্টার্ভিউ নামক পুলসিরাতটা পার হওয়ার ব্যাপার আছে। তাই এই ব্লগে আমরা জানবো, ইন্টার্ভিউ পার হবার কিছু দরকারি ইন্টার্ভিউ টিপস ।   

ইন্টার্ভিউতে কিকি দেখা হয়?

একটা আনুষ্ঠানিক ইন্টার্ভিউতে আসলে অনেক কিছুই হতে পারে। যেমন- অনেক প্ল্যান করে গেলেও দেখা যায়, যিনি ইন্টার্ভিউ নিচ্ছেন, তার হয়তো আজ মুডই খারাপ। আমাদের অ্যামেরিকান দূতাবাসে যারা ভিসা ইন্টার্ভিউ ফেস করেছেন, তাদের এধরণের অভিজ্ঞতা আছে! তবে, এটা সাধারণভাবে বলা যায়- আপনি যে কোন চাকরি, ট্রেনিং বা একাডেমিক যোগ্যতার জন্য ইন্টার্ভিউ দেন না কেন, সবগুলোর মূল অভিজ্ঞতা মোটামুটি একই রকমের হয়ে থাকে।

যিনি ইন্টার্ভিউ নেবেন, মানে আপনার সম্ভাব্য বস কিন্তু সব সময়ে আশা করেন না যে, আপনি আগে সেই কাজটি করেছেন। তিনি আসলে আপনার প্রাসঙ্গিক অভিজ্ঞতা বা শক্তিগুলো খুঁজবেন। মানে সোজা কথায়, আপনি এই কাজটা ঠিকঠাক করতে পারবেন কিনা। স্কিল বা শিক্ষাগত যেসব টেস্ট আছে, যেমন- IELTS জাতীয় ইন্টার্ভিউগুলোতে দেখা হয় আপনার শিক্ষা ও আগ্রহ। এছাড়াও আছে টিমওয়ার্ক বা অন্য মানুষের সাথে আপনি কতোটা কাজ করতে পারবেন,  সমস্যা সমাধান করার সামর্থ্য আর সব লেভেলের কর্মীদের সাথে যোগাযোগ দক্ষতা।

ইন্টার্ভিউ-এর প্রস্তুতি ( ইন্টার্ভিউ টিপস )

  • ঠিক কি ধরণের চাকরির জন্য ইন্টার্ভিউ দিতে চাচ্ছেন, তার সমস্ত বিবরণ মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। তাদের ম্যানেজমেন্ট কিকি দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা খুজছে, তা ভালো করে বুঝুন।
  • কোম্পানির ব্যাপারে গভীরভাবে জানার জন্য তাদের ওয়েবসাইট ঘেঁটে ভালো করে স্টাডি করুণ।
  • যারা আপনার ইন্টার্ভিউ নেবেন, তারা আপনার সিভি দেখে বেশ কিছু প্রশ্ন করবেন। তাই নিজের সিভিটা খুব ভালো করে বানান। দরকার হলে ইউটিউব থেকে বা পেশাদার সার্ভিসের সাহায্য নিন। তারপর নিজেই বের করার চেষ্টা করুন আপনার সিভি দেখে সাক্ষাৎকারকারী আপনাকে সম্ভাব্য কিকি প্রশ্ন করতে পারেন। একটা কথা মনে রাখবেন, একগাঁদা অপ্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সিভি ভারী করে রাখলেও দীর্ঘমেয়াদে কোন লাভ নেই।

ইন্টার্ভিউ-এর দিন ( ইন্টার্ভিউ টিপস )

এই দিনটাতে একটু নার্ভাস বোধ করা খুবি স্বাভাবিক। এটা সবার ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। এবার এই বিশেষ দিনটির জন্য কিছু টিপস দেয়া যাক। 

  • ঢাকার রাস্তায় জ্যামের যে অবস্থা, তাতে সময় হাতে নিয়ে বের হবেন। কোনভাবেই যাতে অন্তত আজকের দিনটাতে লেট হয়ে যাবেন না।  
  • ইন্টার্ভিউ সেশন শুরু হয়ে গেলে মোবাইলটি সাইলেন্ট করে ফেলুন। সবচে ভালো হয় একেবারে বন্ধ করে ফেললে। এতে আপনার মনোযোগ অন্য দিকে চলে যাবেনা।
  • ইন্টার্ভিউ যদি অনলাইনে হয়, তাহলে আপনার কম্পিউটার আর ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক আছে কিনা- তা ভালো করে পরীক্ষা করে নিন।
  • ইন্টার্ভিউ–তে নিজের সিরিয়াল আসার ৫-১০ মিনিট আগে থেকেই ফোকাস থাকুন।

ইন্টার্ভিউ যখন শুরু ( ইন্টার্ভিউ টিপস )

স্বাভাবিকভাবেই যে কোন ইন্টার্ভিউ শুরু হয় পরিচয় পর্বের মাধ্যমে। এরপর আপনাকে এই প্রতিষ্ঠানে ঠিক কিকি ধরণের কাজ করতে হবে, তার একটা ধারণা দেয়া হবে। এসব বিষয়ে আপনার স্কিল লেভেল ঠিক কতোটা সেটার পরীক্ষাটাই হচ্ছে আসল টেস্ট! প্রশ্ন-উত্তরের এই যুদ্ধে আপনার নিজস্ব কিছু রণকৌশল মাথায় রাখা জরুরী। যেমন, এখানে কয়েকটা বুলেট পয়েন্ট দেয়া হল-

  • কোন প্রশ্ন বুঝতে না পারলে, ইন্টারভিউয়ারকে বিনয়ের সাথে বলুন- ‘আমি ঠিক বুঝতে পারিনি, প্লিজ আরেকটু বিস্তারিত বলবেন?’ আমাদের অনেকেরই ধারণা, এটা শুনলে কেউ হয়তো মাইন্ড করবে, বা অভদ্র ভাববে, যেটা একেবারেই ঠিক না।
  • অনেকে প্রশ্ন শুনেই সেটা লিখে ফেলতে চেষ্টা করেন, যেটা একটু দৃষ্টিকটু। আসলে ঠিকঠাক মনোযোগ দিলে, কোনরকম নোট নেবার কোন দরকার নেই।
  • মাথায় সবসময়ে একটা প্ল্যান-বি রাখুন। যতো ভালো প্রস্তুতি নিয়েই যান না কেন, যে কোন সময়ে অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটে যেতে পারে। তাই ঘাবড়ে না যেয়ে, ঠাণ্ডা মাথায় সেই পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। নিজের স্বাভাবিক আত্মবিশ্বাস যাতে কখনো হারিয়ে না যায়। এই চাকরি না পেলে, আমার সব শেষ- এরকম মানসিকতা থাকলে আসলেই সেই চাকরিটা আর পাবেন না!
  • ইন্টার্ভিউতে বডি ল্যাংগুয়েজ বা শরীরী ভাষা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই চোখে চোখ রেখে কথা বলুন, মিষ্টি হাসি দিন, আর শান্তভাবে বসুন। আর অনলাইনে হলে, ক্যামেরার দিকে তাকান—এটা আপনার আত্মবিশ্বাসের ছাপ ফেলবে।

ইন্টার্ভিউ-এর পর ( ইন্টার্ভিউ টিপস )

ইন্টার্ভিউ শেষ হয়ে গেলে, স্মার্টলি বিদায় নিয়ে বের হয়ে আসুন। মনে রাখবেন, কোন ফলোআপ থাকলে তারাই সেটা আপনাকে জানাবে। নিজে থেকে ইমেল বা ফোন কল করার কোন দরকার নেই। আপনার কোয়ালিটি প্রমাণ করতে পারলে, তারাই আপনাকে ডাকবে। আর শেষ পর্যন্ত চাকরিটা পেয়ে গেলে তো কথাই নেই, আপনাকে অভিনন্দন! তবে, জয়েন করার আগে কয়েকটা ব্যাপার নিশ্চিত হয়ে নেবেন।     

  • অফার লেটারটি যাতে অবশ্যই লিখিতভাবে থাকে। মুখের কথার কোন আইনগত ভিত্তি নেই।  
  • কবে থেকে অফিস শুরু করতে হবে- সেই তারিখটা নিশ্চিত করুন, সেইসাথে আপনার যদি কোন নোটিস পিরিয়ড থাকে, সেটাও ভালো করে জেনে নিন।
  • কাজের ধরণ বা ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে কোন প্রশ্ন থাকলে জিজ্ঞেস করুন।
  • সবশেষে, বেতন নিয়ে যাতে কোন ধোঁয়াশা না থাকে। আমাদের এতো কষ্ট করে চাকরি করার আসল প্রেরণা তো সেটাই!

চাকরিটা যদি না হয়!

ইন্টার্ভিউ দিয়ে সফল না হতে পারার ব্যাপারটা নিঃসন্দেহে খুব হতাশার। তাই আপনাকেও যদি এটা কখনো ফেস করতে হয়, তাহলে মন তো খারাপ হবেই। তবে, এটাও মনে রাখতে হবে- একটা ভালো চাকরি পাওয়ার আগে বেশ কয়েকটা ইন্টার্ভিউ পার হয়ে যেতে হবেই। প্রথম বলেই ছক্কা হয়ে যাবে- এটা আশা না করাই ভালো। একটু বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করুণ, ঠিক কোন কোন জায়গাগুলোতে আপনি ভালো করতে পারেন নি। এটি আপনাকে পরের বারের জন্য আরও ভালো করতে সাহায্য করবে। যদি সম্ভব হয়, তাহলে আপনি ইন্টারভিউয়ারের কাছেও ফিডব্যাক চাইতে পারেন— আপনার ইন্টার্ভিউটি কেমন হয়েছিল বা কোথায় কোথায় আপনি আরও ভালো করতে পারতেন, সে সম্পর্কে তারাই আসলে সবচে ভালো বলতে পারবেন।

আপনার পরবর্তী ইন্টার্ভিউয়ের জন্য অনেক শুভকামনা।   

ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্সে ভর্তি হতে পারেন আজই যোগাযোগ করতে পারেন এখানে

More Posts

Scroll to Top