কর্ম-জীবনে ভারসাম্যঃ বাড়ি থেকে কাজ (রিমোট জব) করার সময় কর্ম  ও ব্যাক্তিগত জীবনের ভারসাম্য নির্ধারণ করা

work-from-home-making-balance-betwwwn-professional-and-personal-Life

কর্ম-জীবন ভারসাম্যের  প্রয়োজনীয়তাঃ বাড়ি থেকে কাজ করার সময় কর্ম  ও ব্যাক্তিগত জীবনের ভারসাম্য নির্ধারণ করা

দূরবর্তী কাজের (রিমোট জবের) যুগে, আমাদের পেশাগত এবং ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে রেখা প্রায়শই অস্পষ্ট হয়ে যেতে পারে । যেহেতু বাড়ি থেকে কাজ করার সুবিধা নতুন একটি নিয়মে পরিণত হয়েছে, তাই আপনার কাজ এবং ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে সামঞ্জস্যপূর্ণ ভারসাম্য নিশ্চিত করতে স্পষ্ট সীমানা স্থাপন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ব্লগ পোস্টে, আমরা দূর থেকে কাজ (রিমোট জব) করার সময় আপনাকে কার্যকর সীমানা নির্ধারণ করতে এবং একটি পরিপূর্ণ কর্ম-জীবনের ভারসাম্য অর্জনে সহায়তা করার জন্য কার্যকর কৌশলগুলি বলার চেস্টা করব। আসুন শুরু করা যাক-

১)  আপনার কর্মক্ষেত্র নির্ধারণ করুনঃ

একটি নিবেদিত কর্মক্ষেত্র তৈরি করা হলো- একটি স্বাস্থ্যকর কর্ম-জীবনের ভারসাম্য গড়ে তোলার একটি মৌলিক উপাদান। এর মধ্যে রয়েছে পেশা এবং ব্যক্তিগত স্থানের মধ্যে পার্থক্য করার জন্য আপনার বাড়ির মধ্যে স্পষ্ট দৃশ্যমান সীমানা নির্ধারণ করা। বাসার একটি নির্দিষ্ট এলাকা বেছে নিন, আদর্শভাবে ব্যক্তিগত এবং অবসর স্থান থেকে আলাদা, এবং এটি শুধুমাত্র পেশাগত কাজ-সম্পর্কিত ক্রিয়াকলাপের জন্য ঠিক করুন। পরিবারে  এই ইচ্ছাকৃত বিচ্ছেদ কেবল একটি স্পষ্ট সীমানা প্রতিষ্ঠার জন্যই নয়, বরং কাজ এবং ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে মানসিক ভারসাম্যকে সহজতর করবে।   

বিস্তারিতঃ একটি নিবেদিত কর্মক্ষেত্র নির্ধারণ করা একটি চাক্ষুষ এবং মনস্তাত্ত্বিক ইঙ্গিত হিসাবে কাজ করে। আপনাকে এমন একটি ফিলিং দেয় যে আপনি একটি  অফিসে কাজের পরিবেশে প্রবেশ করছেন। মাইন্ড-সেটে সম্ভাব্য বিভ্রান্তি হ্রাস করার জন্য এই  কর্মস্থলটি সাধারণ বাসস্থান থেকে দূরে থাকা উচিত। এই দৃশ্যমান সীমানা আপনার মাইন্ডসেট তৈরি করে।  পারিবারিক কোলাহল কিংবা অর্থহীন চিন্তা থকে নিজের মনোযোগ পেশদার কাজের দিকে সহযোগীতা করে। এই বিচ্ছেদ কর্ম-সম্পর্কিত চাপকে ব্যক্তিগত সময়কে অতিক্রম করা থেকে বিরত করে একটি স্বাস্থ্যকর কর্ম-জীবনের ভারসাম্যকে উন্নীত করে।

2. কাজের নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুনঃ

একটি সফল কাজের রুটিন গঠন এবং ভারসাম্যপূর্ণ জীবন বজায় রাখার জন্য স্পষ্ট কাজের সময় নির্ধারণ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল। স্পষ্টভাবে আপনার কাজের সময় নির্ধারণ করুন এবং সহকর্মী, ক্লায়েন্ট এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে স্বাতন্ত্র বজায় রেখে যোগাযোগ করুন। এটি কেবল একটি কার্যকর রুটিনই প্রতিষ্ঠা করে না বরং একটি কাঠামোগত পরিবেশও তৈরি করে যা উৎপাদনশীলতা বাড়ায়। আপনার কাজের সময়ের ব্যাপারে কেবল অন্যকে অবহিতই করে না বরং একটি স্ব-আরোপিত সীমানা হিসাবেও কাজ করে।  কখন কাজের দিকে মনোনিবেশ করার সময় আসে এবং কখন আপনার ব্যক্তিগত জীবনের দিকে মনোনিবেশ করা উচিত তার ইঙ্গিত দেয়।

বিস্তারিতঃ একটি নির্দিষ্ট সময়সূচী মেনে চলার মাধ্যমে, আপনি কেবল আপনার কাজের সময়কে অনুকূল করতে পারবেন এমনই না বরং ব্যক্তিগত ক্রিয়াকলাপ, পারিবারিক সময় এবং বিশ্রামের জন্য নিবেদিত স্লট তৈরি করতে পারবেন।  এই রুটিন পেশা-সম্পর্কিত কাজগুলিকে ব্যক্তিগত সময়ে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত রাখে। এটি  একটি স্বাস্থ্যকর কর্ম-জীবনের পেশা ও ব্যক্তিগত জীবনের মাঝখানে  ভারসাম্য রাখে । পরিবারের সদস্যদের সাথে এই সময়গুলিতে যোগাযোগ করা বোঝাপড়া এবং সহযোগিতা বৃদ্ধি করে, গুরুত্বপূর্ণ কাজের সময়গুলিতে বাধা হ্রাস করে।

3. পরিবারের সঙ্গে আপনার স্বপ্ন ও  প্রত্যাশার কথা বলুনঃ

দূরবর্তী কাজের জন্য সহায়ক পরিবেশ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে খোলাখুলি আলাপ করুন। এই নির্দিষ্ট সময়ে নিরবিচ্ছিন্ন মনোযোগের জন্য তাদের সহযোগীতা নিন।  নিশ্চিত করুন যে আপনি স্বচ্ছভাবে আপনার কাজের সময়গুলি কাজে লাগাচ্ছেন । স্পষ্ট আলাপের মাধ্যমে আপনি সম্ভাব্য বাধাগুলি হ্রাস করতে পারবেন এবং এমন একটি পরিবেশ তৈরি করেন যা একাগ্রতার জন্য অনুকূল।

বিস্তারিতঃ আপনার কাজের সময়সূচী এবং নির্দিষ্ট সময়গুলির রূপরেখা তৈরি করতে আপনার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথোপকথন শুরু করুন, যে সময়ে আপনার মনোযোগ গভ্যীর ও কেন্দ্রীভূত করা প্রয়োজন তা জানান। নিরবচ্ছিন্ন কাজের সময়ের গুরুত্বের উপর জোর দিন এবং সম্ভাব্য বাধাগুলি হ্রাস করার কৌশলগুলি নিয়ে আলোচনা করুন। এই উন্মুক্ত সংলাপ কেবল বোঝাপড়াই বাড়ায় না, আপনার কাজের লক্ষ্যগুলিপুরনে সাহায্য করে এমন একটি পরিবেশ।

4. পরিকল্পিত বিরতি নিনঃ

স্বাস্থ্যকর কর্ম-জীবনের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য নির্ধারিত বিরতি অনস্বীকার্য। শরীর ও মনকে রিচার্জ করতে, আপনার কর্মক্ষেত্র থেকে দূরে সরে যেতে এবং এমন ক্রিয়াকলাপে জড়িত হোন যা আপনাকে আনন্দ ও শিথিলতা এনে দেয়। এটি একটি ছোট হাঁটা, স্ট্রেচিং ব্যায়াম, বা একটি দ্রুত মাইন্ডফুলনেস সেশন যাই হোক না কেন, বিরতিগুলি কেবল আপনার সামগ্রিক সুস্থতায় নয়, টেকসই প্রোডাকটিভিটিতেও অবদান রাখে।

বিস্তারিতঃ বার্নআউট রোধ করতে এবং সর্বোত্তম ফোকাস বজায় রাখতে আপনার দৈনন্দিন রুটিনে বিরতি অন্তর্ভুক্ত করুন। এই সময়টিকে পেশা-সম্পর্কিত কাজগুলি থেকে বিচ্ছিন্ন হতে এবং আপনার মন ও শরীরকে পুনরুজ্জীবিত করে এমন ক্রিয়াকলাপে জড়িত হোন। বিরতি নেওয়া কোনও বিলাসিতা নয় বরং টেকসই উৎপাদনশীলতা এবং মানসিক সুস্থতার জন্য এটি প্রয়োজন, যা আপনাকে নতুন শক্তি এবং সৃজনশীলতার সাথে আপনার কাজে ফিরে আসতে  সাহায্য করবে।

5. না বলতে শিখুনঃ

সফল হবার জন্য  প্রয়োজন হলে “না” বলতে শেখা গুরুত্বপূর্ণ যোগ্যতা বলে বিবেচিত হয়। কারন,  অতিরিক্ত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার ফলে আপনি ক্লান্ত হয়ে পড়বেন এবং আপনার কাজ এবং ব্যক্তিগত জীবন উভয়ের উপরই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। স্বাস্থ্যকর কর্ম-জীবনের ভারসাম্য বজায় রাখার মূল কৌশলগুলি হল,  নিজের পেশাগত কাজগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া। যখন সম্ভব  নয় তখন, অন্যের উপর দায়িত্ব অর্পণ করা এবং নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে আপনি কিংবা আপনার টিম কী অর্জন করতে পারেন সে সম্পর্কে বাস্তবসম্মত প্রত্যাশা বজায় রাখা।

বিস্তারিতঃ আপনার সক্ষমতার সীমা চিহ্নিত করুন এবং আপনি যে কাজ ও দায়িত্বগুলি গ্রহণ করেন সেগুলির ্টাস্ক ও টাইমিং সম্পর্কে পরিস্কার ধারনা রাখুন। কাউকে “না” বলার অর্থ প্রতিশ্রুতির অভাব নয় বরং আপনার মানসিক সুস্থতা বজায় রাখা এবং উচ্চমানের কাজ প্রদানের একটি আত্ম- প্রতিশ্রুতি। গুরুত্ব এবং তৎপরতার উপর ভিত্তি করে কাজগুলিকে অগ্রাধিকার দিন। প্রিস্তিতি বিবেচনায় কাজের প্রায়োরিটি লিস্ট (অগাধিকার তালিকা) করুন। সেই মোতাবেক  প্রতিশ্রুতি দিন, যা করার ক্ষমতা সম্পর্কে আপনি দক্ষ ও আত্মবিশ্বাসী। “না” বলতে শেখা আপনাকে আপনার অগ্রাধিকারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কাজগুলিতে মনোনিবেশ করতে, বিক্ষিপ্ত হওয়া রোধ করতে এবং আপনার পেশাগত কাজ এবং ব্যক্তিগত জীবন এর  সময়কে অর্থবহ করতে পারবে।

৬)  দিনের শেষে পাওয়ার ডাউনঃ

স্বাস্থ্যকর কর্ম-জীবনের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য আপনার কর্মদিবসের একটি স্পষ্ট সমাপ্তি নির্ধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনার শরীর ও মনকে শক্তিশালী করা এবং আপনার কর্মক্ষেত্র থেকে শারীরিকভাবে আলাদা হওয়া, পেশাগত কাজের মোড থেকে ব্যক্তিগত সময়ে প্রবেশের  ইঙ্গিত দেয় এই সমাপ্তির সময়। এই  সমাপ্তি আপনাকে শিথিল করতে, কাজ-সম্পর্কিত চিন্তাভাবনা থেকে বিচ্ছিন্ন হতে এবং ব্যাক্তিগত কিংবা পারিবারিক ক্রিয়াকলাপে সম্পূর্ণরূপে জড়িত হতে উৎসাহ দেয়।

বিস্তারিতঃ আপনার কর্মদিবস শেষ করার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন এবং তা ধারাবাহিকভাবে মেনে চলুন। আপনার কম্পিউটারটি জাস্ট বন্ধ করে দিন, নো ইউটিউব, নো স্যোস্যাল মিডিয়া আপডেট। এমনকি কাজের সাথে সম্পর্কিত নোটিফিকেশন গুলিও বন্ধ করুন।  আপনার কর্মক্ষেত্র এবং থাকার জায়গার মধ্যে একটি দৃশ্যমান বিভাজন তৈরি করুন। এই ইচ্ছাকৃত অধ্যায়টি মানসিকভাবে বন্ধ করতে সাহায্য করে, আপনার ব্যক্তিগত সময়ে কাজ-সম্পর্কিত চাপের অনুপ্রবেশ রোধ করে। আপনার বাড়ির অফিসের আলো বন্ধ করা বা আপনার কাজের উপকরণগুলি গুছিয়ে রাখার একটি সাধারণ রুটিনই হোক না কেন, এই অনুশীলনটি একটি ভারসাম্যপূর্ণ কর্ম-জীবনের গতিশীলতায় উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখে।

৭) নিয়োগকারীর নেতিবাচক প্রভাব এড়িয়ে সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখাঃ

ইদানিং কিছু নিয়োগ কর্তারা খুব আগ্রহের সাথে রিমোট জবে লোক নিয়েগে ভীষন আগ্রহ দেখাচ্ছেন। সেসব কাজের জন্য চার দেওয়ালের মধ্যে কোন বোরিং বসের আন্ডারে থাকের প্রয়োজন হয়না, সেসব স্কিলের জন্য রিমোট জবের মার্কেট টা অনেক ভালো। কনটেন্ট রাইটিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, ওয়েব ডেভল্‌মেন্ট , ভিডিও এডিটি্‌ গাফিক ডিজাইন সহ বহু ডিজিটাল স্কিলের জন্য রিমোট জব নিয়োগকারীই অফার করেন।  কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, কিছু নিয়োগকারী নিজেদের স্বার্থে ২৪ ঘন্টা ধরে ইমপ্লয়ি দের কাজের ভেতরে রাখার একটা নোংরা মানসিকতা ধারন করেন। এবং সেই কর্মচারির ব্যাক্তিগত ও পারিবারিক জীবন বিষিয়ে তোলেন, যার অধিকার তার নাই। এধরনের অভিজ্ঞতা এড়াতে অবশ্যই নিয়োগ দাতার সাথে কাজের বিস্তারিত ও কর্ম সময় নিয়ে আলোচনা করে নেওয়া খুবই দরকার।

বিস্তারিতঃ

হাজার হাজার মাইল দূর থেকে  লক্ষ-লক্ষ ডলারের কাজ এবং প্রোজেক্ট ইউ এস এ , ইউ কে , ইউরোপ থেকে প্রতিদিন আসছে। কাজ দেবার জন্য তারা, ডেকোরেটেড অফিস, বড় প্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেট ইত্যাদি, এগুলা খোজেনা। তারা খোজে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা।  দক্ষদের জন্য মার্কেট চিরদিন ই ভালো থাকবে।  কাজেই নিজের দক্ষতা বৃদ্ধির দিনে মনোযোগী হোন। ভালো কাজ পেতে একটু সময় লাগবে ঠিক কিন্তু আপনি তা অবশ্যই পাবেন। সেজন্য, নিরন্তর লেগে থাকুন, সামান্য সময় জব-লেস থাকার কষ্টে কোন ফ্রড অথবা ধান্দাবাজ ইমপ্লয়ার এর পাল্লায় পরবেন না।

পরিশেষে, বাড়ি থেকে কাজ করার সময় একটি স্বাস্থ্যকর কর্ম-জীবনের ভারসাম্য অর্জনের জন্য  সুস্পট পার্থক্য নির্ধারণ করা প্রয়োজন। ামাদের মনে রাখতে হবে যে, জীবনের জন্য কাজ, কাজের জন্য জীবন নয়। নিজের স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে উচ্চাভিলাষী কোন বস কিংবা মালিকের উপরে উঠার সিড়ি হবার আগে আমাদের অবশ্যই নিজের ও নিজের পরিবারের কথা ভাবতে হবে। পাশাপাশি এই ক্রমবর্ধমান ওয়ার্কিং কালচারের সাথে  নিজেকে টিকিয়ে রাখতে হবে নিজের দক্ষতাকে আপডেট করার মাধ্যেমে।  

More Posts

Scroll to Top