অনলাইন ইনফ্লুয়েন্সার হচ্ছে এমন কেউ, যাকে শুধু তার পাওনাদাররাই চেনে! কথাটা অবশ্য বলিউড অভিনেত্রী কারিনা কাপুর মজা করেই বলেছিলেন। আজকাল এমন কাউকে আর খুঁজে পাওয়া যাবেনা, যে এই ইনফ্লুয়েন্সার হতে চায়না। ব্র্যান্ড কোম্পানির টাকায় খেতে বা ঘুরতে কার না ভালো লাগে! তাই এই ব্লগে আমরা জানবো, ইনফ্লুয়েন্সার হবার সহজ উপায়!
অনলাইন ইনফ্লুয়েন্সার কি?
ইনফ্লুয়েন্সার শব্দটা যে ইনফ্লুয়েন্স বা প্রভাব থেকে এসেছে, সেটা তো বোঝাই যাচ্ছে। তারমানে, ইনফ্লুয়েন্সার কথাটার মানে হচ্ছে- প্রভাবক। সোশ্যাল মিডিয়া বুম করার পর থেকেই এই টার্মটা সৃষ্টি হয়েছে। এখন একজন ইনফ্লুয়েন্সার হচ্ছেন এমন একজন, যিনি তার সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেলগুলো ব্যবহার করে তার ফলোয়ারদের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারেন। সোজা বাংলায় অনলাইনের মানুষজন তার কথাবার্তা মন দিয়ে শোনে।
আর এই বিশেষ ক্ষমতাটা ব্যবহার করেই এখন একজন বেশ ভালো টাকা রোজগার করতে পারেন। কারণ, তখন অনেক ব্র্যান্ড তার কাছে আসে তাদের প্রোডাক্টকে প্রমোট করতে। মার্কেটিং-এর ভাষায় এটাকেই এখন বলে ‘ব্র্যান্ড এনডোর্সমেন্ট’। তারমানে শুধু অর্থহীন বা আকামের ফলোয়ার থাকলেই হবেনা, সক্রিয় একটা অনলাইন বাহিনী গড়ে তুলতে হবে। যেমন, আমাদের দেশে সালমান মুক্তাদির বেশ অনেকদিন ধরেই একজন জনপ্রিয় ইনফ্লুয়েন্সার। তার ফলোয়াররা তার প্রতি অনুগত। তার এখন একটা নিজস্ব ফ্যান-বেজ আছে, যাদেরকে সে দরকারে পরিচালিত করতে পারে। আর এটাকেই পুঁজি তিনি গড়ে তুলেছেন goosebumps বা pizzaburg-এর মত সফল ব্র্যান্ড।
অনলাইন ইনফ্লুয়েন্সাররা আসলে কি করে?
ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং-এ কোম্পানিগুলো বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম, যেমন-ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম বা টিককের জনপ্রিয় ইনফ্লুয়েন্সারদের সাথে হাত মিলিয়ে তাদের ব্র্যান্ড বা প্রোডাক্ট সোশ্যাল নেটওয়ার্কে ছড়িয়ে দেয়। ইনফ্লুয়েন্সার হতে গেলে কোন বিশাল সেলিব্রিটি হবার দরকার নেই। যারা ইনফ্লুয়েন্সার, তারা আসলে সোশ্যাল মিডিয়ার সফল কনটেন্ট ক্রিয়েটর। এদের সবারই এমন কোন নির্দিষ্ট স্কিল আছে,যা তার দর্শককে আঁটকে ফেলে। এদের সবার মধ্যে তিনটি বেসিক বৈশিষ্ট্য দেখা যায়-
• বিশেষ একটা ইউনিক স্কিল, যা খুব একটা কমন না।
• তাদের কনটেন্টে বিনোদন বা শিক্ষা- একটা থাকবেই।
• সব ইনফ্লুয়েন্সারদেরই নিজস্ব একটা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য থাকে। সেটা হয়তো কারো কাছে আকর্ষণীয় লাগে, আবার কারো কাছে অসহ্য! তবে, অনলাইনে কখনো ভণ্ডামি করে বেশী দিন টিকে থাকা যায়না।
কিভাবে হবেন অনলাইন ইনফ্লুয়েন্সার ?
ইনফ্লুয়েন্সার হবার মিশন থাকলে, এটাকে একটা ফুল-টাইম ক্যারিয়ার হিসেবে হিসেবে নেয়াই ভালো। অনলাইনে এখন দারুণ প্রতিযোগিতা। জাস্ট একটা ফোন দিয়েই ভিডিও বানানো যাচ্ছে বলে এখন ঘরে ঘরে কনটেন্ট ক্রিয়েটর। আর এদের মধ্যে থেকেই বের হয়ে আসছে নতুন নতুন ইনফ্লুয়েন্সার! নিজের প্যাশনকে ঠিকঠাক কাজে লাগাতে চাইলে, এই কার্যকর ধাপগুলো ধারাবাহিকভাবে অনুসরণ করা যেতে পারে…
বিজনেস প্ল্যান
ইনফ্লুয়েন্সার হবার স্বপ্নকে একটা স্টার্টআপ বা ব্যবসার মতোই দেখা ভালো। কারণ, চূড়ান্ত লক্ষ্য যেহেতু টাকা কামানো। তাই একটা ব্যবসায়িক পরিকল্পনা তৈরি করে ফেলুন, যেখানে লক্ষ্য থাকবে ফলোয়ার বাড়ানো, পছন্দের ব্র্যান্ডের সঙ্গে কাজ করা, আর সবশেষে আয় বাড়ানো।
আপনি নতুন কিকি অফার করছেন বা আপনার ক্যাটাগরির প্রতিযোগী ইনফ্লুয়েন্সারদের ভালো মত বিশ্লেষণ করতে হবে। এরপর ইনফ্লুয়েন্সার টুলস জোগাড় করা, যেমন—Canva দিয়ে সাধারণ গ্রাফিক্স ডিজাইন করা, বা Linktree দিয়ে দর্শকদের ক্লিক করার জন্য URL লিঙ্কগুলো একত্র করা।
নিজের আসল জায়গাটা খুঁজে বের করা-
Niche মার্কেট হলো গ্রাহকদের একটা খুব নির্দিষ্ট অংশ, যাদের কাছে একজন ইনফ্লুয়েন্সার অনলাইনে মার্কেটিং করতে পারে। আপনার সুনির্দিষ্ট Niche–এর ওপরেই নির্ভর করবে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনি ঠিক কি ধরণের কনটেন্ট শেয়ার করবেন। সেইসঙ্গে আপনার টার্গেট অডিয়েন্স-এর ডেমোগ্রাফিক্স (মানে বয়স, অবস্থান, বা আয়) গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। তাছাড়া, তাদের মূল্যবোধ, বিশ্বাস, বা আগ্রহও তাদের কাছে দ্রুত পৌঁছাবার একেকটা রাস্তা।
টার্গেট অডিয়েন্স চিনে নেয়া
একবার Niche ঠিক হয়ে গেলে, মার্কেট রিসার্চ করে টার্গেট অডিয়েন্স-কে ভালো করে স্টাডি করতে হবে। তাদের জন্য এমন কনটেন্ট পোস্ট করতে হবে, যাতে তাদের সাথে একটা মজবুত বন্ধন সৃষ্টি করে ফেলা যায়। এতে ফলোয়ারের সংখ্যাও অর্গানিকভাবে বাড়তে থাকবে। ভালো করে খেয়াল করতে হবে আপনার দর্শকরা কোন কনটেন্টে সবচেয়ে বেশি সাড়া দিচ্ছে, বা তারা পোস্টের নীচে বা ম্যাসেজে কি ধরণের কমেন্ট করছে।
নিজের অনলাইন ইনফ্লুয়েন্সার ব্র্যান্ড তৈরি করা
ইনফ্লুয়েন্সার ব্র্যান্ডকে একটা পার্সোনাল ব্র্যান্ডের মতোই ভাবতে হবে। এটা আপনার ব্যক্তিত্ব, মূল্যবোধ, আর প্যাশনের একটা মিলিত যোগফল- যা আপনার ফলোয়ারদের কাছে একটা নির্দিষ্ট বিষয়ে আপনার অথরিটি দেয়।
এছাড়া, আপনার ইনফ্লুয়েন্সার ব্র্যান্ডের জন্য একটা নির্দিষ্ট স্টাইলও বেছে নিতে পারেন- রঙ, ফন্ট, এমনকি কণ্ঠস্বরও আপনার একটা আলাদা ব্র্যান্ড বানিয়ে তুলতে সাহায্য করবে।
অনলাইনে নিজের উপস্থিতি বাড়ান
শুধু একটা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বা ইউটিউব চ্যানেল খুলে ফেললেই ইনফ্লুয়েন্সার হওয়া যায়না। এটা আসলে একটা সামগ্রিক এপ্রোচ। আপনার একটা অনলাইন পরিচিতি আরেকটার পরিপূরক হতে পারলেই আপনার প্রভাব দ্রুত বাড়বে। যেমন- একটা কোয়ালিটি ওয়েবসাইট বানানো যেতে পারে। যেখানে সোশ্যাল মিডিয়া ফলোয়ার আর ব্র্যান্ডগুলো আপনার সম্পর্কে আরও জানতে পারবে, আপনার ইমেইল কনটেন্টে সাবস্ক্রাইব করতে পারবে, আর ব্লগ আর্টিকেল বা লম্বা কনটেন্টও পড়তে পারবে।
নিয়মিত পোস্ট
একটা দারুণ কনটেন্ট বানিয়ে ভাইরাল হয়ে যাবার পর হাওয়া হয়ে গেলে কোন কাজ হবেনা। চ্যানেল আর প্ল্যাটফর্ম ঠিক করে ফেলার পর, দীর্ঘমেয়াদে সবচে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে ধারাবাহিকতা। নিয়মিত ভালো কনটেন্ট পোস্ট করে গেলে, আজ হোক কাল হোক- ফল আসবেই!
ব্র্যান্ড এনডোর্সমেন্ট
আপনার কনটেন্ট একবার ধারাবাহিক ভাবে হিট হতে থাকলে আর চিন্তা নেই। মোটামুটি একটা ফলোয়ার সংখ্যা দাড়িয়ে গেলেই বুঝবেন- এবার বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সাথে পার্টনারশিপের সময় হয়েছে। আজকাল অনেক ডিজিটাল এজেন্সি আছে, যারা ইনফ্লুয়েন্সার আর ব্র্যান্ডের সাথে যোগাযোগটা করিয়ে দেয়। এজন্য অবশ্য তারা ১০ থেকে ১৫% কমিশন কেটে রাখে। এটা দিতে না চাইলে, নিজেই ব্যান্ডের একটা তালিকা বানিয়ে সরাসরি প্রস্তাব দেয়া যেতে পারে। আপনি কিভাবে তাদের সাথে কাজ করতে চান, যেমন- স্পনসর্ড পোস্ট বা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বা ভিডিও কনটেন্ট- তার ওপরই নির্ভর করছে আপনার পারিশ্রমিক। তাছাড়া, বাঙ্গালীর শেষ অস্ত্র দড় কষাকষি তো আছেই!
তাহলে আর কি, শুরু করে দিন.. গুড লাক!
ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্সে ভর্তি হতে পারেন আজই যোগাযোগ করতে পারেন এখানে